কিডনি রোগ থেকে বাঁচার উপায়
কিডনি রোগের প্রকোপ আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে।বাংলাদেশেও দিন দিন কিডনি রোগির সংখ্যা বেড়েই চলছে।এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত বেয়বহুল।অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও দরিদ্র হিসাবে আমাদের দেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার কমতি থাকার কারণে এদেশে কিডনি বিকল রোগীদের চিকিৎসার সুযোগ খুবই কম।যেহেতু এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত বেয়বহুল,তাই চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর আমাদের দেশে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।সেই সাথে আর্থিক ভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
বর্তমানে সারাবিশ্বে কিডনি রোগীদের নিয়ে চিন্তার ধরন কিছুটা পাল্টে গেছে।এখন চিকিৎসকরা ভাবছে কিভাবে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা যায়।তারা কিডনি বিকল রোগীদের চিকিৎসার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কিডনি বিকল প্রতিরোধ নিয়ে।
কিডনি বিকল একটি ভয়াবহ রোগ।আসুন আমরা সংক্ষেপে জেনে নেই কিভাবে এই ভায়াবহ রোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি।সচেতনতা ও দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই আমরা এই কিডনি বিকল প্রতিরোধ করতে পারি।
কিডনি রোগ থেকে বাঁচার উপায়
১।ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস থাকলে সহজেই মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস কিডনি বিকল এর প্রধান কারণ।তাছাড়া ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস শরীরে আরো বিভিন্ন রকমের রোগ বয়ে নিয়ে আসে।এর কারণে হৃদরোগ,স্ট্রোক,চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়।তাই কিডনি রোগের পাশাপাশি এই সব রোগ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।রক্ত চাপ এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে যেন তা সবসময় ১৩০/৮০ নিচে থাকে।আর ব্লাড সুগার এমন ভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে যাতে হিমগ্লোবিন HbA1C লেভেল ৭ এর নিচে থাকে।
২।কিডনি ভাল রাখতে হলে নিয়মিত শরীরচর্চার পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রম করতে হবে।অলসতা দূর করে নিয়মিত হাটতে হবে।নিয়মিত শরীরচর্চা ও পরিশ্রম ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনে আনে।পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন দিন হাঁটার কারণে মানুষের গড় আয়ু ১৩ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে।
৩।কিডনি রোগ প্রতিরোধ করতে হলে পানির কোন বিকল্প নাই।কিডনি ভাল রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।পানির অপর নাম জিবন।পানি কিডনি ভালো রাখার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন রকমের রোগ প্রতিরোধ করে।তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
৪।কিডনি ভাল রাখতে হলে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে।মানুষের শরীরে যখন অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায় তখন ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যাসহ আরো বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দেয়।যেসব খাবার খেলে শরীরের ওজন ঠিক থাকে নিয়মিত সেসব খাবার খেতে হবে।
৫।কিডনি ভাল রাখতে হলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।বাইরের খাবার ও অতিরিক্ত তেল,চর্বি,মশলাজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কিডনি ভাল রাখতে হলে আরো একটি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখা জরুরি তা হলো পরিমিত পরিমাণে লবন খাওয়া।সারাদিনের খাবারে ১ চামচ লবন খাওয়ায় যথেষ্ট।খাবারে আলাদা লবন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে সুষম খাদ্য গ্রহন করতে হবে।নিয়মিত ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে।
৬।ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।ধূমপানের কারণে শরীরে নানা রোগের বাসা বাধে।প্রতিবছর ধূমপানের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায়।কিডনি বিকল,কিডনিতে ক্যান্সার,ফুসফুসে ক্যান্সার,হৃদরোগ,ও স্ট্রোকসহ নানা রকমের মরণব্যাধি ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে।কাজেই বাঁচতে হলে ধূমপান বর্জন করতে হবে।
৭।অনেকেই আছে যারা ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ ও নিয়মিত এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করে থাকে।যা কিডনির জন্য ক্ষতিকর।দীর্ঘদিন ধরে এই সব ওষুধ সেবন করলে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে।তাই ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোন ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
৮।বেশির ভাগ কিডনি রোগে কোন উপসর্গ থাকেনা।এটি নিরব ঘাতক।যারা ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত তাদের সহজেই কিডনি আক্রান্ত হতে পারে।তাই যারা ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত তাদের কিডনি পরিক্ষা করা উচিত।তাছাড়া যাদের বয়স চল্লিশঊর্ধ্ব তাদের বছরে ২ বার কিডনি পরিক্ষা করা উচিত।
সুস্থ-সবল বেঁচে থাকার জন্য উপরোক্ত পরামর্শগুলো অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।দৈনন্দিন জীবনে কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে কিডনি রোগ সহ নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।তাই বাঁচতে হলে আমাদের এইসব নিয়ম মেনে চলতে হবে।
Great news information